মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়,
দেশের নীতি নির্ধারণী কাজে আপনাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় জেনেও আমরা
আপনার কাছেই আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার জন্য বার বার ছুটে আসি। আপনিও আমাদের
ডাকে বরাবরই সাড়া দেন। সে সাহস থেকেই এলাকার অভিভাবক ও আমাদেরই কাছের একজন হিসেবে
আজ একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনার সামনে। জানি, স্বভাবসুলভ সরল স্নেহে
আপনি আমাদেরকে নিরাশ করবেন না।
সমাজতত্ত্ববিদরা
মনে করেন, একটি জাতি সরকারের কাছ থেকে প্রথমে যা চায় তা হলো নিরাপত্তা। এরপর দাবি করে
কল্যাণ। পরিশেষে চায় উন্নয়ন ও মুক্তি। ধনবাড়ীর প্রবাদপুরুষ নবাব
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী (২৯ ডিসেম্বর ১৮৬৩ - ১৭ এপ্রিল ১৯২৯) সফলভাবে এলাকার
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কল্যাণের জন্য ১৯১০ সালে ক্রিকেট খেলার মাঠ হিসেবে বহুল
পরিচিত ‘বড় মাঠ’টিকে উন্মুক্ত করেন। শুধু তাই নয়, তাবৎ ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব রাজা-জমিদার
ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ক্রিকেট খেলার সুবিধার্থে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ঘাসের বীজ
এনে তৈরি করা হয় কার্পেট ঘাসের ক্রিকেট গ্রাউন্ড। কালের বিবর্তনে মাঠটির সংরক্ষণের
দায়িত্ব বর্তায় ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশনের ওপর। একই সাথে মাঠটি হয়ে ওঠে আগামী দিনের
যাদুকর সামাদের স্বপ্নের কারখানা ও সাকিব-মাশরাফিদের ইডেন গার্ডেন।
স্বর্গের কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে স্বর্গোদ্যান থেকে আদম-হাওয়া
বিতাড়িত হলেও, ইদানীং কোনো অপরাধ ছাড়াই ভবিষ্যতের তারকা খেলোয়াড়রা মাঠ থেকে
বিতাড়িত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছর যাবৎ খেলোয়াড়ী বুটের এ অভয়ারণ্যে অযাচিতভাবে
অনুপ্রবেশ করছে চতুষ্পদ গরুর দ্বিখণ্ডিত খুরের ছাপ। জন্ম থেকেই খেলার মাঠ হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করেও আপনার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত স্কুলমাঠ ক্রমেই পরিণত হচ্ছে
দুর্গন্ধযুক্ত গোবরসমৃদ্ধ গরুর হাটে।
খলিফা পট্টি রাস্তার শেষে মধুছন্দা হলের বাম কোণার তৎকালীন বটতলার
পেছনের অংশের সেই বিরাট গরুর বাজার কেন যেন ক্রমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোলে জায়গা
করে নিচ্ছে। ধনবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠ, ধনবাড়ি কলেজিয়েট মডেল স্কুল মাঠের পর
আক্রান্ত হচ্ছে সরকারি এ বিদ্যাপীঠের পবিত্র মাঠ। খেলার মাঠ যদি তার জন্মপরিচয়ই
হারায়, তাহলে কীভাবে শিক্ষার্থীরা সুর করে সমবেত আবৃত্তি করবে সুনির্মল বসুর ‘সবার
আমি ছাত্র’ কবিতার পঙক্তি ‘খোলা মাঠের উপদেশে-/ দিল-খোলা হই তাই রে’? কিংবা, ‘একটি
মাঠের আত্মকাহিনী’ রচনার উপসংহারে তারা কীভাবে এড়াবে কান্নাজড়িত দুঃখগাথা?
অর্থনৈতিক লাভকে আমলে এনে যে বা যারাই এ অপকর্মটি করছে তাদের
দুরভিসন্ধি মাঠে মারা
খেতে বাধ্য। কেননা, কলকাতার গড়ের মাঠের মত আমাদের মেলার মাঠ আমাদের সংস্কৃতি ও পরিচিতির
অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন-এর মতে, ‘the fundamental
source of conflict in this new world will not be primarily
ideological or primarily economic. The great divisions among humankind and the
dominating source of conflict will be cultural.’ বিশ্বাস না হলে ইতিহাস দেখুন, উঠতি
বয়সের ছেলেদের খেলার মাঠে ব্রিটিশ সেনাছাউনি করার প্রভাবেই কিন্তু গতিশীল হয়েছিল মাস্টারদা’
সূর্য সেনের ভারত স্বাধীন করার প্রথম পদক্ষেপ।
তাই,
আপনিই পারেন গরুর হাটের দৌরাত্ম্যে মৃতপ্রায় এ খেলার মাঠকে বাঁচাতে।
আর মাঠ বাঁচলেই, বাঁচবে তারুণ্য।
নিবেদক
শামীম আল মাহমুদ (শিমুল)
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, অভয়ারণ্য (Sanctuary)
(ধনবাড়ীবাসীর
পক্ষে)