শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

প্রচলিত নেতৃত্ব তত্ত্বঃ নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ প্রস্তাবনা


সূচনাঃ টেকসই উন্নয়ন ও শিল্পনির্ভর অর্থনীতির আজ এই যুগে নেতৃত্ব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। যদিও সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই বলা যায় যে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। জানা যায় যে, নেতৃত্ব নিয়ে প্রায় ১৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দেও কথাবার্তা চলেছিল। নেতৃত্ব শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Leadership. Leadership শব্দটি এসেছে Lead শব্দটি থেকে। Lead শব্দটি থেকে উদ্ভূত Leader Leading প্রত্যয় হতে ক্রমবিবর্তিত হয়ে Leadership-এর উদ্ভাবন হয়েছে। যার বাংলা প্রতিশব্দ হল নেতৃত্ব, অগ্রনায়কের কাজ, পরিচালনার কাজ, দলপতির নির্দেশনা কাজ ইত্যাদি।
Leadership বা নেতৃত্ব যেহেতু অনেক আগে থেকেই চর্চিত একটি সর্বজনীন বিষয়, তাই সময়ের সাথে সাথে এর প্রতি আচরণগত বা দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। প্রথম দিকে নেতৃত্ব বলতে প্রেষণা প্রদান করার ক্ষমতাকে সাধারণভাবে নির্দেশ করা হতোঅর্থাৎ, মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে কাজ করানোকেই নেতৃত্ব বলে নির্দেশ করা হতো। প্রথম দিকে মূলত সামাজিক নেতৃত্বকেই সাধারণভাবে নেতৃত্ব বলা হতো। আর নেতৃত্বের দরকারী বা প্রয়োজনীয় জায়গা ছিল যুদ্ধনীতি ও রাজ্য পরিচালনা নীতি। পরবর্তীতে সামাজিক সম্পত্তি নীতি বা সামন্ততন্ত্রের শেষ দিকে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পণ্য উৎপাদনের প্রতি জোর দেওয়া হয়। আধুনিক কালে অন্যদের আচরণ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন কিংবা পরিমার্জনের ক্ষমতাকে নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মূল কথা হল, নেতৃত্ব হল কোন এক বা একাধিক লোকের নির্দেশনায় বহু সংখ্যক লোকের সম্মিলিত শ্রম দেওয়ার প্রক্রিয়া যাতে একটি নির্দিষ্ট কাজ সহজে সম্পন্ন হয়।
তাত্ত্বিকভাবে, নেতৃত্ব প্রত্যয়ে কালক্রমিক বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তার ঢেউ ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও কমবেশি বিদ্যমান। তবে, বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবক নেতৃত্বেও তাত্ত্বিকতা থেকে বেশ বিচ্যূত ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখা দেয়। তার একটি কারণ অবশ্য স্বল্প শিক্ষা তথা সুশিক্ষার স্বল্প প্রসারতা। প্রাচীন গ্রীসের মানুষজন প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে অভ্যস্ত ছিল তাতে কোন সমস্যা না হওয়ার কারণ হল তাদের বেশিরভাগ লোকই সুশিক্ষিত ছিল। বর্তমান সময়ে নেতৃত্ব নেতার সুবিধাকেন্দ্রিকতার গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ সময় সুবিধা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অনুসারীদের করায়ত্ত হয় না। নেতৃত্ব বর্তমানে একটি সুবিধা গ্রহণের হাতিয়ার হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন অনেক নেতৃত্ব আছে যেখানে নেতা ও অনুসারীর মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও নেতার বিপরীত আদর্শকে অনুসারী আঁকড়ে থাকে সুবিধা পাওয়ার আশায়। তবে, পিরামিড আকৃতির সুবিধাভোগীদের স্তরবিন্যাসের কারণে নেতা সুবিধাপ্রাপ্ত হলেও সুবিধাবঞ্চিতদের কাতারে থাকে শুধু অনুসারীরাই। আবার, Right man in right place কথাটি চর্চিত হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক সময় অর্থ কিংবা স্বজনপ্রীতির বশে তা ঘটে ঠিক উল্টো। অনেক ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, নেতার নির্বাচিত হওয়ার আগের চিত্র আর অনুসারীদের সাথে তার সম্পর্কের চিত্র নির্বাচিত হওয়ার পর মেলানো দুষ্কর। তাই, বর্তমানে প্রচলিত নেতৃত্ব তত্ত্বের যেটুকু আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আয়ত্তের ভেতর পড়েছে তার আলোকে একে ত্রুটিহীন করতেই আমার এই প্রয়াস।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমার নিজ জেলা টাংগাইলের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তার ফলে, বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব নীতি, তত্ত্ব ও রীতির প্রয়োগ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায়ই গণতান্ত্রিক নেতৃত্বকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে, বিভিন্ন পরিস্থিতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর সাথে কোমল কঠিন বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণে একটি স্থানীয় কাঠামো দান করা হয়। তাই, আমি মূলত গণতান্ত্রিক নেতৃত্বগামী নেতৃত্ব তত্ত্বের প্রচলিত অসঙ্গতিকে তুলে ধরতে চাই ও তার নিরসনপূর্বক একটি নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ একটি নেতৃত্বের মডেল বা তত্ত্বের প্রস্তাবনা প্রদান করতে চাই।
এই আরোপিত কাজটি আমার একান্ত আগ্রহের জায়গা ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার সম্পন্ন করার একটি উপাদান হিসেবে করা। এটিতে আমি আমার নিজস্ব মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আমি তাত্ত্বিকতা প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। তাই, এটিতে আমার নিজস্ব বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, ভালো লাগা ইত্যাদি প্রচ্ছন্নভাবে হলেও গুরুত্ব পাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, যথেষ্ট নিরপেক্ষতার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি এটি প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। তবু, এতে তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারের চেয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকেই বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাই, সহায়ক গ্রন্থতালিকার আকার খুব বেশি লম্বা হয়নি। তবে, যেসব বই বা জ্ঞানভাণ্ডার থেকে তথ্য আহরিত হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে কোন ধরনের কার্পণ্য করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে, নান্দনিক তাত্ত্বিকতার চেয়ে বাস্তবিক অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে করা হয়েছে বলে যদি কেউ একে মন্ময় সাধারণীকরণ কল্পনা বলে আখ্যায়িত করতে চান, তবে আমি তাকে কিছুই বলবো না। তবে, এটুকু স্মরণ রাখা জরুরি যে, স্নাতকোত্তর শ্রেণির একজন ছাত্র ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার নিজের ইন্দ্রিয়গুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা বিরাজমান।
বর্তমান সময়ের বিশ্বায়নের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত দেশসমূহের মানুষের নিশ্চুপতার সংস্কৃতি ভাঙ্গতে হলেও প্রশ্ন করা দরকার। তাই, এটি হয়েতো কোন একটি প্রশ্নকে উসকে দেবে যা ভাঙ্গবে হাজার বছরের নৈশব্দ। তবে, এটি যদি সেরকম গুরুত্ববহ নাও হয়, তবু কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর মত বর্তমানের মানুষের মনে ভবিষ্যৎ চিন্তার সম্ভাবনা উঁকি দেওয়াতে পারলেও আমি খুশি। এই মডেলটি অনুসারীদের কথা মাথায় রেখে করা, তাই যদি কোন অনুসারীবাৎসল নেতা এর কিয়দংশও প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন তবে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এটি যেহেতু অনুসারীকেন্দ্রিক, তাই শিক্ষা প্রক্রিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মত যদি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক তথা অনুসারী কেন্দ্রিক নেতৃত্বের যুগ আসে, তবে এটি সমাদর পেতে পারে। কিংবা বলা যায় না, এমনও হতে পারে যে, এই তত্ত্বটিই জোর করে অকালবোধিত করতে পারে অনুসারীকেন্দ্রিক নেতৃত্বের যুগের।
এই আরোপিত কাজটি করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও অনুসারী হিসেবে কাজ করার সময় আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে। তাই, বলা যায় যে, অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণই এই কাজের প্রধান হাতিয়ার। তবে, পর্যবেক্ষণ করার সময় সচেতনভাবে এই কাজটি করার কথা মাথায় না থাকায় ঠিক ততোটা কাঠামোবদ্ধ বিন্যস্ত বিশ্লেষণ পাওয়া সম্ভব নয়। আবার, এ পর্যবেক্ষণ বাদে যাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, তারা যেহেতু সতর্ক বা জ্ঞাত ছিল না, তাই সঠিক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে যে নেতৃত্বটি বেশি আলোকপাত করা হয়েছে তা হল স্বেচ্ছাসেবী নেতৃত্ব যাতে উৎসর্গ বেশি করে ফলাফল শূণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই, আদি, অকৃত্রিম ও যোগ্য নেতৃত্ব বিশ্লেষণ এতে রয়েছে।
উদ্দেশ্যঃ আরোপিত কাজটি করা হয়েছে শিক্ষাক্রমিক কাজের অংশ হিসেবে। এতে যেসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার চিন্তা করা হয়েছে সেগুলো হলঃ
1.      প্রচলিত নেতৃত্ব সংক্রান্ত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি
2.     নেতৃত্ব সংক্রান্ত নিজস্ব প্রস্তাবনার অবতারণা
3.     প্রচলিত নেতৃত্বের তত্ত্বের উপর নির্ভর করে একটি স্বতন্ত্র নেতৃত্ব তত্ত্ব উপস্থাপন
4.     প্রচলিত নেতৃত্ব তত্ত্ব সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বর্ণনাঃ নেতৃত্বের প্রায়োগিক গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে নেতৃত্বের কতিপয় তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। এ পর্যন্ত নেতৃত্ব সম্পর্কে যেসব তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে তাদের সম্প্রসারিত অবস্থাকে সংক্ষিপ্ত কলেবরে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলে নেতৃত্বের সমুদয় তত্ত্বগুলোকে নিম্নোক্ত উপায়ে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়। যথাঃ
ক। আচরণভিত্তিক নেতৃত্বের তত্ত্ব (Behaviour Theory of Leadership)
খ। মিশ্র নেতৃত্বের তত্ত্ব (The Composite Theory of Leadership)
গ। পরিস্থিতি প্রেক্ষিত নেতৃত্বের তত্ত্ব (Situational Theory of Leadership)
ঘ। গুণাবলিভিত্তিক নেতৃত্বের তত্ত্ব (Trait Theory of Leadership)
ঙ। অনুগামী নেতৃত্বের তত্ত্ব (Follower Theory of Leadership)
ক। আচরণভিত্তিক নেতৃত্বের তত্ত্বঃ এ তত্ত্বের প্রবক্তাদের মতে, নেতৃত্ব হচ্ছে মূলত নেতার বিশেষ আচরণগত সামষ্টিক প্রক্রিয়া। এ তত্ত্বে নেতার আচরণ কিংবা কাজের মাধ্যমেই নেতৃত্বের দায়িত্ব সম্পাদিত হয়ে থাকে। এ তত্ত্ব অনুসারে, আচরণের কারণেই সার্থক এবং ব্যর্থ নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটে থাকে। আচরণভিত্তিক নেতৃত্বের নেতার পুরস্কার কিংবা তিরস্কার সুনির্বাচিত থাকে। এ তত্ত্বের স্বপক্ষে কতগুলো গবেষণালব্ধ সমীক্ষণ রয়েছে। যেমনঃ
1.      মিচিগান সমীক্ষা মডেল
2.     ওয়াহাইও স্টেট সমীক্ষা মডেল
3.     ব্যবস্থাপকীয় গ্রীড মডেল
খ। মিশ্র নেতৃত্ব তত্ত্বঃ আধুনিক যুগে নেতৃত্বের তত্ত্বকে কতগুলো বিশেষ গুণাবলি অনুসারীদের প্রয়োজন চাহিদা ও সমস্যাবলি সাংগঠনিক পরিবেশ পরিস্থিতি এবং দল ভিত্তিক অবস্থা ইত্যাদি বিশেষ অবস্থার সাথে সাফল্যকরণ করা হয়েছে। বস্তুত, নেতৃত্বের অন্যান্য তত্ত্ব অপেক্ষা মিশ্র তত্ত্বটি একটু আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর উপর আগেও অনেক গবেষণা হয়েছিল, এখনও চলছে। তবে, এখন পর্যন্ত এর কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণালব্ধ ফলাফল বের হয়নি।
গ। পরিস্থিতি প্রেক্ষিত নেতৃত্ব তত্ত্বঃ পরিস্থিতিবাদীদের মতে, কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে নেতার আবির্ভাব ঘটে থাকে। কাজেই শুধুমাত্র গুণাবলির ভিত্তিতে নেতৃত্বের তৈরি হবে এসকল ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত নয়। বরং পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নেওয়াটাই এখানে শ্রেয়। এ তত্ত্বের মূল দর্শন হলো নেতা কাজ করবেন সে পরিস্থিতিতেই নেতৃত্বের ভিন্নতা এবং ধরনের আবির্ভাব ঘটে। নেতৃত্বের পরিস্থিতি তত্ত্বটি বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ তত্ত্ব অনুযায়ী কোন ব্যক্তি নেতৃত্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরিহার্য গুণাবলির অধিকারী হয়ে বিশেষ কর্ম পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে এ সকল গুণাবলির অনুশীলন বা চর্চা করে কতটুকু সফলতার পরিচয় দিতে পারেন তাকেই নেতৃত্বের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাপেক্ষে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব হয়েছে। নেতৃত্বের পরিস্থিতি প্রেক্ষিত তত্ত্ব অনুযায়ী দুই ধরনের নেতৃত্বের মডেল পাওয়া যায়। যেমনঃ
১। ফ্রেড ফিডলার মডেল
২। হারসিও ব্ল্যাঞ্চার্ড মডেল
ঘ। গুণাবলিভিত্তিক নেতৃত্ব তত্ত্বঃ মানবীয় গুণাবলিভিত্তিক নেতৃত্বের তত্ত্বটি অতি প্রাচীন। একে আবার মহামানব তত্ত্ব বলা হয়। গ্রীস এবং রোমান সাম্রাজ্যে এ তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে। এ তত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, নেতা জন্মগ্রহণ করেন, তাকে তৈরি করা যায় না। ঐশ্বরিক কৃপায় নেতা জন্মায়, প্রকৃতিগতভাবেই কতিপয় অতি মানবীয় গুণাবলি নিয়ে নেতা জন্মায় – Leader born naturally with special characters. তাকে মানুষ নিজ হাতে তৈরি করতে পারে না। অর্থাৎ, নেতার বৈশিষ্ট্য হলো জন্মগত এবং অর্জিত নয়। এ তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তাদ্বয় বার্নাড এবং অডোয়া টিউড-এর মতে, যেসকল গুণ বা মানবীয় বৈশিষ্ট্য একজন নেতাকে তার নেতৃত্বের আসনে আসীন করে তার অধিকাংশই আসে বংশ পরম্পরায় জন্মগত চেতনায়। পরিবেশ পরিস্থিতি কিছু কিছু গুণের অবারিত বিকাশ ঘটায় মাত্র। সম্প্রতি Stogdill কর্তৃক পরিচালিত জরিপ ফলাফল অনুযায়ী, নেতৃত্ব সংক্রান্ত এ মানবীয় গুণাবলিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১। শারীরিক গুণাবলি
২। মানসিক গুণাবলি
৩। সামাজিক গুণাবলি
৪। কার্যাবলি সংক্রান্ত গুণাবলি
ঙ। অনুগামী নেতৃত্ব তত্ত্বঃ শিক্ষাবিদ স্ট্যান্ড ফোর্ড নেতৃত্বের এ অনুগামী তত্ত্বের উদ্ভাবন করেন। এ তত্ত্ব অনুযায়ী অনুগামী ব্যক্তিবর্গ বা অনুসারীবৃন্দ ঐ ব্যক্তিকেই নেতা বলে স্বীকৃতি দেয় যার মাধ্যমে সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক অভাব অভিযোগ এবং চাহিদা পূরণের প্রত্যাশা পূর্ণ হয়। অতএব, অনুসারীদের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের সন্তুষ্টির বিধান করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিই হলেন এখানে নেতা। উক্ত নেতার নেতৃত্ব বা আচরণের মধ্য দিয়েই তাদের চাহিদাবলির পরিতৃপ্তি ঘটবে। অনুগামী নেতৃত্বের তত্ত্বে এ চেতনাই ফুটে ওঠে। এখানে নেতার গুণাবলি বংশগত হতে পারে। আবার অর্জিত এবং পরিস্থিতি সাপেক্ষে হতে পারে। অনুগামী তত্ত্ব অনুযায়ী অনুসারীদের আশা আকাঙ্ক্ষার পরিপূরণের তাৎপর্যময় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নেতার নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা হয়। জনকল্যাণই এখানে মুখ্য বিষয়।
নেতৃত্বের ধরনঃ বর্তমান সময়ে প্রচলিত নেতৃত্বে বিভিন্ন ধরন প্রতিফলিত হচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ তাদের আলোচনায় বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্বের কথা বলেছেন। যথাঃ
১। স্বৈরতান্ত্রিক প্রভুত্বমূলক নেতৃত্ব
২। গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব
৩। অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্ব
৪। আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব
৫। ব্যক্তিগত নেতৃত্ব
৬। আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব
৭। ক্যারিজম্যাটিক নেতৃত্ব
৮। অবাধ নেতৃত্ব
নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ নেতৃত্ব তত্ত্ব প্রস্তাবনাঃ আমার মতে, নেতৃত্ব হলো নেতা তৈরি করার প্রক্রিয়া। ফলে, প্রাথমিকভাবে নেতা নির্বাচিত হবে অনুগামী নেতৃত্ব তত্ত্ব দ্বারা। আর নেতার নেতৃত্বের সময়সীমা নির্ধারিত হবে আচরণভিত্তিক নেতৃত্ব তত্ত্ব দ্বারা। এ তত্ত্ব অনুসারে নেতা কোন বিশেষ কোন লোক নন বরং নির্দিষ্ট একজন অনুসারী যিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুসারীদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন অনুসারীদের মুখপাত্র হিসেবে। এক্ষেত্রে নেতা কোন বিশেষ সুবিধা পাবেন না বরং তার দায়িত্ব থাকবে অনুগামীদের চেয়ে বেশি। নেতা সব সময় অনুগামীদের মাঝে বিশ্বাসযোগ্য থাকবেন। অনুগামীদের যেকোন প্রশ্নের জবাব দিতে নেতা সর্বদা বাধ্য থাকবেন। এ তত্ত্ব অনুসারে নেতা ও অনুসারীদের মাঝে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে শতভাগ। এতে কর্মবিভাজনের ব্যবস্থা থাকবে। নেতা কর্তৃক বিভাজিত কর্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুসারীগণ অন্যান্য অনুসারীগণের সহায়তায় কাজ সম্পাদন করবেন। এক্ষেত্রে নির্বাচিত অনুসারীগণের পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে নিজস্ব সৃজনশীলতা বিকাশের। কাজটি সম্পন্ন হলে তার প্রশংসা ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে অনুসারীগণকে। নেতা কাজগুলো তত্ত্বাবধায়ন করবেন ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাবনা প্রদান করবেন। কিন্তু প্রস্তাবনা গ্রহণের ইচ্ছা নির্ভর করবে অনুগামীগণের উপর যারা ঐ কাজের জন্য নির্বাচিত হবেন। কোন নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় গণতান্ত্রিক রীতি অনুসৃত হবে। নেতা সংখ্যাগরিষ্ঠ ফলাফল ঘোষণা করবেন এবং মানসম্মত সিদ্ধান্তের প্রতি যুক্তি প্রদান করতে পারবেন। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে বহু স্তর বিশিষ্ট নেতৃত্ব চর্চা হবে। দলকে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত করে তাতে নেতৃত্বের চর্চা করবে অনুসারীরা যারা নেতার পর্যবেক্ষণ থেকে নির্বাচিত হবে বা অনুসারীদের ভোটে নির্বাচিত হবে। নেতৃত্ব রীতি হিসেবে অনুসরণ করা হবে অবাধ নেতৃত্বকে আর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করা হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। নেতার সময়সীমা থাকবে অল্প। অর্থাৎ ৪ বা ৬ মাস পর পর নেতা পরিবর্তিত হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে আচরণভিত্তিক অনাস্থা জ্ঞাপিত হলে নেতাকে তার নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে জাপানে প্রচলিত Sophisticated Leadership-এর সম্মিলন সাধিত হবে। কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে Art of Delegation-কে অনুসরণ করা হবে যেন নেতাকে সব ধরনের কাজের বোঝা মাথায় না নিতে হয়। নেতার কাজ থাকবে মূলত মানসিক তথা কাজের পরিকল্পনা, দূরদর্শিতা মূল্যায়ন, SWOT Analysis, কাজের প্রয়োগমুখিতা ইত্যাদি বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা। কাজ বাস্তবায়নের মাত্রা নির্ভর করবে নির্বাচিত অনুসারীবৃন্দের উপর। মোট কথা জন্মগতভাবে কেউ নেতা বা কেউ অনুসারী হয়ে আসতে পারে না বরং অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান-দক্ষতাই তাকে নেতার আসনে আসীন করে। তাই, বিভিন্ন নেতৃত্ব মডেল ও রীতির সমন্বয়ে নেতা চাইবেন তার প্রতিরূপ বা তার জায়গায় বসার মত একজনকে তৈরি করে যেতে আর অনুসারীরা পরিকল্পনা মাফিক কাজকে বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখবে। তবে, এক্ষেত্রে নেতা যদি স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করে তবে এ মডেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই, জন্মগত সুবিধাকে বাতিল করে এক্ষেত্রে জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত করতে হবে। জন্ম দিয়ে মানুষকে বিচার করার পুরাতন রীতি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও বৈষম্যপূর্ণ। তাই, কাজ সম্পাদন ও অনুসারীদের প্রতি পূর্ণ ইতিবাচক ব্যবহারকারীরাই নেতা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য। এক্ষেত্রে নেতা তার যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করে নেতৃত্ব থেকে অব্যহতি নেবেন। তাই, সেই নেতাই সফল যিনি তার প্রতিরূপ সহজেই অল্প সময়ে তৈরি করতে পারবেন। অন্যান্য জায়গায় নেতা তার নেতৃত্ব আঁকড়ে ধরে থাকার মনোভাব প্রদর্শন করতে পারলেও এক্ষেত্রে নেতার নেতৃত্ব ছাড়ার মাঝেই অন্তর্নিহিত হবে তার সাফল্য। ফলে, তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসবে ঠিক সময়ে। আর নেতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ সকলের পক্ষেই সম্ভব হবে। নামকরণের ক্ষেত্রে বলা যায়, এ তত্ত্বটির নাম হতে পারে অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক নেতৃত্বের তত্ত্ব।
অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক তত্ত্বের সবল দিকঃ
১। এটি অনুসারীকেন্দ্রিক তত্ত্ব।
২। এতে নেতা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন।
৩। যোগ্যতাভিত্তিক নেতৃত্বের স্বাদ সবারই অল্প সময়ে পাওয়ার সুযোগ আছে এতে।
৪। এতে নেতা আচরণের ভিত্তিতে টিকে থাকেন। সুতরাং, অনুসারীরা সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার আশা করতে পারবেন।
৫। এক্ষেত্রে নেতা ও অনুসারীদের মাঝে কোন কঠিন ভেদরেখা থাকে না বললেই চলে।
৬। এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা সর্বোচ্চ মাত্রায় রক্ষিত হবে।
৭। এতে কর্ম বিভাজন হবে খুবই সতর্কতার সাথে। অর্থাৎ, কাজ ভাগ করার সময় নিজস্ব চাহিদা, ভালো লাগা ও একঘেঁয়েমিতার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে।
৮। নিজস্ব সৃজনশীলতা বিকাশে এটি সহায়ক।
৯। অনুসারীরা নিজস্ব ক্ষেত্রে কাজ করার বিষয়ে স্বাধীনতা ভোগ করবেন।
১০। নেতার কাছে অনুসারীরা নির্দ্বিধায় নিজস্ব মতামত বা প্রস্তাবনা ও বিরুদ্ধাচরণ (গঠনমূলক ও যৌক্তিক) প্রদর্শন করতে পারবে।
১১। অবাধ নেতৃত্ব বা গণতান্ত্রিক চর্চা পরোক্ষভাবে অনুসারীদের মাঝে নেতৃত্ব গুণাবলির চর্চা অব্যাহত রাখবে।
১২। নেতার সময়সীমা কম থাকবে বলে সে যথেচ্ছাচার করতে পারবেন না। আর তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুসারীদের ভালো করায় মনোযোগ দেবেন।
১৩। যিনি নেতা হবেন, তিনি মাঠ পর্যায়ের ও মানসিক পরিশ্রম দুটোতেই দক্ষ হবেন।
১৪। জন্মগত বৈষম্য নয়, এক্ষেত্রে সব অনুসারীরই নেতা হওয়ার সুযোগ থাকবে।
১৫। এতে নেতা তার কর্মস্থল ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ করতে চাইবেন না, কারণ তা তার ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হবে।
অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক তত্ত্বের দুর্বল দিকঃ
অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক তত্ত্বের দুর্বল দিকগুলো নিম্নরূপঃ
১। এতে প্রথাগত নেতৃত্ব তত্ত্বের মত নেতা প্রত্যয়টির ক্ষমতা নেই।
২। এক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমিকভাবে নেতা হিসেবে সবচেয়ে অপেক্ষাকৃত অযোগ্য লোকও নেতা হতে পারবেন।
৩। অনুসারী সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতার মেকি লোক দেখানো ভালো আচরণ দ্বারা প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা একটু হলেও থাকে।
৪। নেতা ও অনুসারীর পার্থক্য খুবই কম বলে এতে নেতা অনুসারী কর্তৃক ছোট অবাঞ্ছিত কারণে লাঞ্ছিত হতে পারেন।
৫। এক্ষেত্রে সৃজনশীলতা প্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতা চলতে পারে, যা ঐ সংগঠনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
৬। নিজস্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে অনুসারীরা তাদের আলসেমির প্রমাণ দিতে পারে যা সার্বিক কাজের ক্ষয় সাধন করতে পারে।
৭। অনুসারীদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতা বা সর্বজনীনতার চেয়ে ব্যক্তিগত অসুবিধা বেশি প্রাধান্য পেতে পারে।
৮। অবাধ নেতৃত্ব অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক চর্চা অশিক্ষিত ও বিবেকহীনদের মাঝে চর্চিত হলে খারাপেরই জয় হবে।
৯। নেতার সময়সীমা কম থাকবে বলে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বড় একটি গর্হিত কাজ করে ক্ষমাপ্রদর্শনপূর্বক অব্যাহতি নিতে পারেন যা সমস্ত সংগঠনের জন্য হঠাৎ বিপদ ডেকে আনবে।
১০। সব অনুসারীর নেতা হওয়ার সুযোগ অনেকের প্রতিযোগিতামূলক ব্যক্তিগত উন্নয়নকে মন্থর করে দিতে পারে। আবার ক্ষুদ্র সময়সীমা নেতার মনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক নেতৃত্ব তত্ত্বের জন্য সুপারিশঃ
অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক নেতৃত্ব তত্ত্বের জন্য সুপারিশগুলো নিম্নরূপঃ
১। ‘নেতা’ প্রত্যয়টির সম্মানবোধের জায়গা দৃঢ় করা
২। নেতাকে যোগ্যতার সাথে সাথে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার দিকে মনোযোগী হওয়া
৩। নেতার সামাজিক ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধ সুস্থিত ও সুন্দর করা
৪। নেতার ও অনুসারীদেরকে নিজ নিজ অহংবোধের বলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা
৫। কাজের প্রতি অনুসারীদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি করা
৬। ব্যক্তিস্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সামষ্টিক স্বার্থে কাজে নামার মত মানসিকতা অনুসারী কর্তৃক অর্জন
৭। অনুসারী ও নেতা উভয়পক্ষকেই সুশিক্ষিত, স্বশিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হতে হবে।
৮। নেতার পরিকল্পনা ব্যতিরেকে কাজের নেশাকে জীবনব্যাপী ব্রত করা
৯। নেতাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী কোমল ও কঠোর হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
১০। নেতাকে হতে হবে নিজের জায়গায় বসানোর মত অনুসারী তৈরির দিকে মনোযোগী আর অনুসারীদের দায়িত্ব হবে অতি আবেগিক না হয়ে যৌক্তিকতার নিরিখে বিষয়বস্তু বিচারের মানসিকতাসম্পন্ন।
আমার জীবনের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক ও অর্থকরী সংগঠনের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব নিয়ে করা শিক্ষায় নীতি, কৌশল ও নেতৃত্ব কোর্স থেকে আহরিত জ্ঞানের তাত্ত্বিকতা মিশ্রিত স্বতন্ত্র চিন্তার প্রতিফলন নেতৃত্ব সংক্রান্ত ‘অনাত্মীয় উত্তরাধিকারমূলক নেতৃত্ব তত্ত্ব’টি। তাত্ত্বিকভাবে এটি বেশ কষ্টসাধ্য বলে মনে হলেও দুটি সংগঠনে এটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বর্তমানে চলছে। এ সংগঠন দুটির একটি হল ‘ধনবাড়ী ইয়ুথ ক্লাব’ আর দ্বিতীয়টি হলো ‘অভয়ারণ্য (Sanctuary)। এদের প্রথমটির বর্তমান সভাপতি এবং দ্বিতীয়টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আমি নিজে। আশার বিষয় হলো, দুটি সংগঠনেই তত্ত্বটি বেশ ভালো ফলাফল প্রদর্শন করছে। যদিও দুটি সংগঠনই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, তবু পরবর্তীতে কোন অর্থকরী সংগঠনের নীতি নির্ধারণী জায়গায় বসার সামর্থ্য হলে এ তত্ত্বটির প্রয়োগে ঐ পরিবেশে এর কার্যকারিতে মূল্যায়নের একান্ত ইচ্ছা আমার রয়েছে। আশা করি, উপর্যুক্ত সুপারিশসমূহ ঠিকভাবে পালন করা হলে এ তত্ত্বটি সব জায়গায়ই নেতৃত্ব তৈরি ও নেতৃত্বের সুপ্ত প্রতিভা অন্বেষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

শামীম আল মাহমুদ (শিমুল)
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, অভয়ারণ্য (Sanctuary)

(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপানুষ্ঠানিক ও অব্যাহত শিক্ষা বিভাগের শিক্ষায় নীতি, কৌশল ও নেতৃত্ব কোর্সের আরোপিত কাজ হিসেবে অধ্যাপক আজহারুল ইসলামের কাছে ২ মে ২০১৬ তারিখে জমাকৃত)

1 টি মন্তব্য:

  1. অনেক ধন্যবাদ। ভাল লেখা। পর্যাপ্ত রেফারেন্স দিয়ে লেখা মনে হয় বাঞ্ছনীয়। শুভেচ্ছা নিবেন।

    উত্তরমুছুন