বক্তব্যের
প্রথমেই সম্মানিত প্রধান
অতিথি,
বিশেষ
অতিথিবৃন্দ,
মাননীয়
উপদেষ্টা
ও উপস্থিত দর্শকমন্ডলীর প্রতি
রইল আমার সশ্রদ্ধ অভিবাদন।
এছাড়াও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করছি ধনবাড়ী
ইয়ূথ ক্লাব-এর
প্রত্যেক
সদস্যের
প্রতি যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে
আজ ‘শত
আশা-
২০১৬’
শীর্ষক
অসামান্য সুন্দর অনুষ্ঠানটি
আলোর মুখ দেখছে। জননন্দিত
ক্লাবটির
উক্ত অনুষ্ঠানে সংক্ষেপে
কিছু বলা সভাপতি
হিসেবে আমার কর্তব্য। আর এ
জন্য আমার এই বক্তব্যের অবতারণা।
এ
অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতির
কারণ একে ঘিরে রাতজাগা কতগুলো
মুখের পরিশ্রান্ত কিন্তু
স্বর্গীয় আভাময় দ্যুতির
প্রকাশ। মূলত উৎসব বা আনন্দানুষ্ঠান
সব সময় তরুণদের কেন্দ্র করেই
আবর্তিত হয়। তরুণরা তাদের
হৃদয়ের গভীর গহীন রত্নাকরের
গোপন সিন্দুক থেকে যেসব
মণি-মুক্তা
পৃথিবীকে দান করে তার আলোয়ই
আলোকিত হয় পৃথিবী। তবে তরুণ
বলতে একতরফাভাবে শুধু বয়সে
কচি ছেলেকেই বুঝায় না। এটি
একটি সর্বজনীন অভিধা যা নারী,
পুরুষ
এমনকি বৃদ্ধ-বৃদ্ধার
ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য
হতে পারে। তারুণ্য হলো মানসিক
ও শারীরিক উভয় অবস্থার সর্বোচ্চ
উন্নতির সমন্বিত শিখরবিন্দু।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়
তার বাহ্যিক বা শারীরিক
তারুণ্যের কমতি নেই কিন্তু
তার অভ্যন্তরীন জগৎ তারুণ্যের
ছিঁটেফোঁটাহীন। আবার অনেকের
ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তার মনে
চিরবসন্তের তারুণ্য কিন্তু
শরীরের জ্যামিতিক বলিরেখা
বলছে তার বয়স বেড়েছে। মানুষের
মনোজাগতিক শক্তিই মানুষকে
অমিত তেজশক্তিতে বলীয়ান করে।
তার প্রমাণ পৃথিবীতে এত বেশি
যে সে কথা বলা বাহুল্য ছাড়া
আর কিছুই না। তবে সোনায় সোহাগা
তখনই হয় যখন মানুষের মধ্যে
বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন উভয়
দিকের তারুণ্যের সমান্তরাল
বিকাশ ও ক্রমপরিবর্ধন ঘটে।
আর আমার সামনে উপবিষ্ট ও
অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
সকলের মধ্যেই এই সুষম সমন্বয়
সমানুপাতে রক্ষিত হয়েছে।
কারণ ধনবাড়ী
ইয়ূথ ক্লাব
মেধা ও সংস্কৃতির বিকাশের
লক্ষ্যে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে
যাচ্ছে।
মানুষের
মেধা বা মনন একটি প্রকৃতিপ্রদত্ত
বিষয় হলেও প্রচন্ড অধ্যবসায়,
মনোযোগ
ও মনোবলের মাধ্যমে তাকে করায়ত্ত
করা যায়। আর পৃথিবীতে দেখা
যায় বেশিরভাগ লোক নিজের জন্মগত
বিপুল
মেধার পরিচয় না পেয়েই পৃথিবী
থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু দ্বিতীয়
ধারা অর্থাৎ স্বনির্মিত
মেধাবীরা নিজেদেরকে উজ্জ্বল
আলোতে ঠিকই মেলে ধরে। আর
এক্ষেত্রে তারা সৃষ্টি সুখের
উল্লাস লাভ করে দ্বিগুণ মাত্রায়।
মেধা,
স্বজ্ঞা
ও বিবেকের কারণে মানুষ অন্যান্য
প্রাণীর চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে
থাকে। তারা অন্যদেরকে নিজ
প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই
এই মেধার সঠিক মূল্যায়ন না
হলে মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হতে
বাধ্য।
অপরদিকে
আমাদের সমগ্র সত্ত্বাই হল
আমাদের সংস্কৃতি। এটি আমাদের
দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত
অভিজ্ঞতা,
পরিবেশ,
ধর্ম,
আবহাওয়া,
সভ্যতা
ইত্যাদি নানান বিষয়ের নিরিখে
গড়ে ওঠে। আমরা আমাদের নিজেদের
সংস্কৃতিকে না জানতে পারলে
কখনোই নিজের মূলকে আবিষ্কার
করতে পারবো না। সংস্কৃতি
আমাদের মনকে নান্দনিক করে।
‘সত্যম,
শিবম,
সুন্দরম’-এ
শিক্ষা আমরা সংস্কৃতি থেকে
পাই। মেধা আমাদেরকে বিবেকবান
বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন মানুষে
পরিণত করে আর সংস্কৃতি আমাদের
আবেগ অনুভূতিসম্পন্ন মানবিকতা
দান করে। এ দুইয়ে মিলে গড়ে ওঠে
সময়োপযোগী কোমল-কঠোর
মানব চরিত্র। তাই সংস্কৃতির
চর্চা আমাদেরকে অতিযান্ত্রিকতা
থেকে নিরাপদ রাখে। বাঙালি
হিসেবে আমাদের হাজার বছরের
বিশাল প্রাচুর্যময় সংস্কৃতি
থাকা সত্ত্বেও দুঃখের বিষয়
এই যে আমরা বর্তমানে ডিজিটাল
প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরতে
ব্যর্থ হচ্ছি। ফলে আকাশ
সংস্কৃতির সহজলভ্যতায় আমাদের
সংস্কৃতির উপর নেমে আসছে
আগ্রাসন। এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ
দেশীয় সংস্কৃতিকে চোখে আঙ্গুল
দিয়ে দেখানোর প্রচেষ্টাটি
নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রসংশার
দাবিদার। দিনকে দিন আমাদের
সংস্কৃতি মুখ লুকাচ্ছে। আমরা
শৈশব পার করেছি নৌকা বাইচ,
কুস্তি,
ঘোড়দৌড়,
লাঠি
খেলা,
বউ
ছি,
গোল্লাছুট,
দাঁড়িয়াবান্ধা,
হা
ডু ডু,
বরফ-পানি,
মার্বেল,
চন্টি
বাড়ি,
চট্টু,
তিন
গুটি প্রভৃতি সাশ্রয়ী কিন্তু
আকর্ষণীয় বৌদ্ধিক খেলা উপভোগ
করে আর এখনকার সে বয়সী ছেলে
মেয়েরা হয়তো অ্যান্ড্রয়েডে
বা ল্যাপটপে টেম্পল রান,
ক্ল্যাশ
অফ ক্ল্যানস,
অ্যাংগ্রি
বার্ডস বা ভাইস সিটি খেলে হাত
পাকায়। আপাত দৃষ্টিতে একে
উন্নতি মনে হলেও এটি খাঁচায়
ব্রয়লার তৈরীর মত একটি শরীরচর্চা
বিবর্জিত প্রজন্ম তৈরীর দিকে
এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বিষয়গুলি
অনেক হালকা মনে হতে পারে কিন্তু
অবহেলা করার মত কখনোই নয়।
তারুণ্যের
রয়েছে অবাধ অপ্রতিরোধ্য
সর্বভুক গতি। যে গতির কারণে
উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু
সর্বত্র সে সমভাবে পূজনীয়।
কিন্তু এই গতিই তার দুর্বলতা
যা তাকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট।
গতিকে যদি সঠিক পথে পরিচালিত
করা যায় তবে তা চলার পথে সোনা
ফলায় কিন্তু গতি কুপথে গেলে
তা অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতি
সাধন করে। বর্তমান প্রজন্মের
তারুণ্য বিভ্রান্তি,
বিশ্বাস
ব্যবসায়,
প্রলোভন,
অনৈতিকতা,
মেকি
সুখের মায়া,
অহংবোধ,
হুজুগ,
মাদক,
যৌন
বিকৃতি,
সম্পর্কের
ফাটল,
অতিযান্ত্রিকতা,
সকাল-সন্ধ্যা
প্রেম,
হাতাশা,
আত্মহত্যা
প্রভৃতি নানা রকম ধোঁয়াশায়
আবৃত। তাদের পৃথিবীকে পরিবর্তন
করার মত শক্তি থাকা সত্ত্বেও
তারা সঠিক দিক নির্দেশনার
অভাবে ডাঙায় তোলা মাছের মত
খাবি খাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে
উত্তরণের একটাই পথ। তা হল
যুগপৎভাবে স্বশিক্ষা ও সুশিক্ষা।
একমাত্র মানবিক,
বিজ্ঞানমনস্ক,
যুক্তিবাদী
শিক্ষাই পারে প্রবল তারুণ্যের
বারুদশালায় দেয়াশলাই কাঠির
মত কাজ করতে। তাই নতুন প্রজন্মের
কাছে আমাদের পৃথিবীকে বাসযোগ্য
রাখার
ক্ষেত্রে
আমাদের অন্যের দিকে তাকিয়ে
না থেকে নিজ থেকে পরিবর্তন
শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে
পৃথিবীর সকল পরিবর্তন শূণ্য
থেকেই শুরু হয়। বর্তমানে আমরা
কোনো রূপকথার রাজ্যে বসবাস
করি না যে রাজপুত্র এসে তার
কারিশমা দিয়ে পরিস্থিতি অনুকূল
করবেন। বরং একবিংশ শতাব্দীর
পৃথিবীতে আমরাই আজ একেকজন
রাজপুত্র,
সুপারম্যান,
ব্যাটম্যান
বা
স্পাইডারম্যানের
মত সুপার হিরো। পুরো
পৃথিবীটাই
আজ
আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
তোমরা
যারা আজ এখানে পুরস্কৃত হচ্ছো
তাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু
না বললেই নয়। তোমরা প্রত্যেকেই
তোমাদের জীবনের চলার পথের
একটি নির্দিষ্ট ধাপ এত চমৎকারভাবে
অতিক্রম করেছ যে পুরো পৃথিবী
তোমাদেরকে মাথা নত করে সম্মান
জানাতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এটিই
শেষ নয় বা শেষের শুরুও নয় বরং
একে বলা যায় শুরুর শুরু। তোমাদের
সামনে পড়ে আছে অনিশ্চিত অসীম
সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ যেখানে
তোমাদের আজকের মত সফল পদচারণা
তখনই হবে যখন তোমরা প্রতিটি
সিদ্ধান্ত ঠিক সময়ে ঠিকভাবে
নিতে পারবে। তোমাদের জ্ঞানস্পৃহার
মশালে ঘি ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিল
তোমাদের অগ্রজ দায়িত্বশীলরা।
অন্তত তাদের প্রচেষ্টাকে
সম্মান জানানোর জন্য হলেও
তোমরা নিজেরা নিজেদের ছাড়িয়ে
যাও। তোমরা উন্নত হলে তোমার
সঙ্গে সঙ্গে নাম হবে তোমার
পরিবার,
বংশ,
সর্বোপরি
এলাকার। তাই মায়ের মত মাটিকে
ভালবেসে তোমরা আকাশের তারার
উচ্চতা লাভ কর এটুকুই আমার
একান্ত কামনা। মনে
রাখবে
পৃথিবী বরাবরই বিজয়ীদের পক্ষে।
তাই তোমাদের পথ চলায় আবারো
শুভ কামনা এবং উপস্থিত সুধী
ও ধনবাড়ী
ইয়ূথ ক্লাব-এর
সকল সদস্যকে অন্তরের
অন্তঃস্থল থেকে
ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার
বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
10 July 2016
Sub-district Auditorium, Dhanbari
NB: The speech was shorten due to lack of time.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন